রূপালী দ্বীপ মনপুরা বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ রূপে ভরা রূপালী এক দ্বীপ নাম তার মনপুরা। তিন দিকে মেঘনা নদী আর একদিকে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত সবুজ-শ্যামলে ঘেরা এ দ্বীপ। সুবিশাল নদী, নদীর বুকে সারি সারি জেলে নৌকা, চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত , অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, দল বেঁধে বুনো মহিষের বিচরণ, একেরপর এক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, আকাশ ছোঁয়া বিশাল কেওড়া গাছের বাগান আর সাগর মোহনার সৈকত এসব নানা কারনে মনপুরা এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় জায়গায় পরিনত হয়েছে। কুয়াকাটার মত মনপুরাতে দাঁড়িয়েও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এ দ্বীপে সকাল বেলার সূর্য যেমন হাসতে হাসতে পূর্ব দিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় বিকেল বেলাতে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকিয়ে ডুবে যেতে। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লোমওয়ালা এখনও বিলুপ্তহীন কিছু কুকুর। এছাড়া দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে তাদের কিছু স্মৃতি চিহ্নের অস্তিত্ব এখনও বিদ্যমান আছে। পর্যটকদের নিকট সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার হাজার হাজার একর জায়গা জুড়ে বিচিত্র সব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
এছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ ও তরুলতা। আর রয়েছে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী। এর গহীন জঙ্গলে ভয়ংকর কিছু প্রাণীও আছে বলে জনশ্রুতিতে রয়েছে। মনপুরার ছোট বড় ১০টি চরে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন এসব চরগুলোর জন্ম। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে।
মনপুরার এসব চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোর জীবনযাত্রার ধরনও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই জেলে, চাষী, দিন মজুর, কৃষক ও খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাই সবুজের সমারোহ আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। স্থানীয়দের দাবি, ভ্রমণপিয়াসুদের আকর্ষন করার মতো অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে এ রূপময় মনপুরার। শীত মৌসুমে এর চিত্র কিছুটা ভিন্ন ধরনের। মনপুরার সব চরাঞ্চলগুলো তখন শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। মনপুরা সদর থেকে ২ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্ব পাশেই গড়ে উঠেছে- মনপুরা ফিশারিজ লিঃ। এটি প্রায় ৬ কিঃ মিঃ দীর্ঘ যা ২১০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে। পুরো ফিশারিজ এলাকায় রয়েছে- বেশ কিছু পুকুর, বিশাল লেক আর প্রচুর নারকেল গাছ। এ খামার বাড়িটি দেখতে তাই প্রতিদিনই নানা ভ্রমণকারীদের উপস্থিতি থাকে। এখানে বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- মহিষের দুধের দই, নদীর টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল, গলদা চিংড়ি আর শীতের হাঁস।
মেঘনা নদী থেকে, ধরে আনা টাটকা ও তাজা রূপালি ইলিশ আর চরাঞ্চল থেকে আনা কাঁচা ঘন দুধের স্বাদই অন্যরকম। ঐতিহাসিক বেভারিজ -এর মতে, অষ্টাদশ শতাব্দিতে মনগাজি নামক এক জৈনক ব্যাক্তি ছিলেন যিনি পুরো মনপুরার জমি জমিদারদের কাছ থেকে লিজে নিয়েছিলেন। তখনই এ দ্বীপের নামকরন করা হয় মনপুরা।
আর স্থানীয় লোকজনের মতে, এখানকার খাঁটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। তাই এর নামকরণ করা হয় মনপুরা। মনপুরা যেতে হলে, প্রথমে আপনাকে ভোলা
জেলা সদরে যেতে হবে
অথবা ঢাকা থেকে মনপুর ও হাতিয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায় সেভাবেও সরাসরি যেতে পারেন।
যদি ভোলা হয়ে যান তবে ভোলা থেকে বাসে করে
চলে যাবেন তজুমুদ্দিন লঞ্চ ঘাটে, সেখান থেকে সী-ট্রাক বা ইঞ্জিন বোটে আপনি যেতে পারেন মনপুরায়। তবে আর দেরি কেন? আপনার পরিজন নিয়ে একটু সময় করে ঘুরে আসুন রূপালী দ্বীপ মনপুরা থেকে।